কিভাবে সিভি লিখতে হয় | CV লেখার নিয়ম বিস্তারিত তথ্য এখানে

সিভি লেখার নিয়ম

আপনি কি সিভি লিখতে চান বা সিভি তৈরি করতে চান। কিভাবে সিভি লিখতে হয় সেটা জানেন তো। যদি আপনি সিভি লেখার নিয়ম না জেনে থাকেন তাহলে আজকে আপনি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানতে পারবেন কিভাবে সিভি লিখতে হয়।

বর্তমান যুগ এখন স্মার্ট আপনি যে কোন চাকরি করতে জান না কেন প্রথমেই আপনার সিভি জমা দিতে হবে। সিভি হল জীবন বৃত্তান্ত বা বায়ো ডাটা। আপনি যেকোন ভালো কোম্পানিতে চাকরি করতে গেলে প্রথমে আপনার কাছ থেকে CV চেয়ে বসবে।

আপনারা যারা নতুন চাকরি করবেন সিভি হল চাকরির প্রার্থীর প্রতিচ্ছবি। আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করতে যাবেন চাকরিদাতারা আপনার কাছ থেকে চাকরির প্রথম পরিচয় হিসেবে চাইবে সিভি।

চাকরিদাতার চাকরিপ্রার্থীর কাছে প্রথম পরিচয় এর মাধ্যম হলো সিভি। চাকরিদাতার কাছে যার CV যত ভালো তিনি তত বেশি এগিয়ে থাকবেন।

যারা নতুন অবস্থায় সিভি তৈরি করতে যাবেন CV টি অল্প কথায় নিজেকে সকল বিষয়ে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

কারন, একটা জরিপে দেখা গিয়েছে যে, নিয়োগ কারীরা একটি সিভির পিছনে এক মিনিটের কম সময় ব্যয় করেন সেজন্য আপনার সিভি অল্প কথায় সব বিষয়ে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

ব্রিটিশ মানবসম্পদ এইচআর ( HR ) বিশেষজ্ঞ David D’Souza and Ruth Cornish এর মতে, CV দেখার পর একজন আবেদনকারী প্রার্থীকে তিনটি কারণে সাক্ষাৎকারে জন্য ডাকা হয় না। কারণ তিনটি হলো – গতানুগতিক ধরনের CV, ভুল বানান ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিভি বানানোর জন্য।

তাই সিভি লেখার সময় আপনাকে সময় নিয়ে ভালোভাবে সিভি তৈরি করবেন, সিভি লেখার সময় যে সকল বিষয় মাথায় রাখবেন তা আপনাদের সঠিক পরামর্শ নিচে স্টেপ বাই স্টেপ দেখিয়ে দিচ্ছি।

নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা

যখন আপনি সিভি তৈরি করবেন তখন সিভির শুরুতে আপনার নিজের নাম ও আপনার যোগাযোগের ঠিকানা থাকা উচিত। ‘কারিকুলাম ভিটা’ বা ‘সিভি’ দিয়ে শিরোনাম করা ঠিক নয়। আপনার নাম শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সিভিতে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার ই-মেইল ঠিকানা এবং মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

এই অংশে লিংকডইন প্রোফাইলের লিংক যোগ করলে আরো সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। একটা বিষয় মনে রাখবেন লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য যেন হালনাগাদ থাকে, আপনাকে কিন্তু সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ছবি

সিভি লেখার সময় বা সিভি তৈরি করার সময় আপনার সম্প্রতি তোলা ঝকঝকে ছবি আপনার সিভিতে ব্যবহার করতে হবে। ছবি হতে হবে পাসপোর্ট সাইজের। টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করা ক্যাজুয়াল CV কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল

সিভি তৈরি করার সময় সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যক্তিগত নিজের প্রোফাইল। সিভিতে আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য তা আপনাকে কিন্তু ভালোভাবে কয়েক লাইনে লিখতে হবে।

সিভিতে আপনার ব্যক্তিগত বক্তব্য এবং তথ্যগুলো যেন সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় থাকে, সেদিকে আপনাকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুই থেকে তিনটি বাক্যের চেয়ে বেশি বাক্য ব্যয় করা অনুচিত।

পেশাগত অভিজ্ঞতা

আপনি আগে যেখানে চাকরি করেছিলেন বা ইন্টার্নশিপ এবং কাজের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত আপনাকে CV তে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। আপনি আরো কোথায় কোথায় চাকরি করেছেন, তা আপনাকে ভালোভাবে ক্রমানুসারে লিখবেন।

সদ্য স্নাতক পাস করা হলে ইন্টার্নশিপ যেখানে করেছেন, তার বিস্তারিত আপনি ভালভাবে তুলে ধরুন। এবং আপনার যদি চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে সর্বশেষ যেখানে আপনি চাকরি করেছেন, সেটি লিখে বাকি প্রতিষ্ঠানের নামগুলো পর্যায়ক্রমে ভালোভাবে লিখুন।

আপনি আগে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম, সেখানে আপনার কাজের বিবরণ বা আপনি কি কাজ করেছেন এবং আপনার অর্জন গুলো ভালোভাবে লিখতে হবে। এর আগে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে কত দিন কাজ করেছেন, সেটিও সিভিতে উল্লেখ করুন।

শিক্ষা

আপনার শিক্ষা বা পেশাগত অভিজ্ঞতা অংশের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার সর্বশেষ পড়াশোনা ও ডিগ্রি যে প্রতিষ্ঠান থেকে, সেটি দিয়ে শুরু করে ক্রমানুসারে মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের নাম আপনাকে সিভিতে ভালোভাবে লিখতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে পাস করার সাল এবং GPA উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। আপনি যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে থাকলে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ লেখা যেতে পারে।

আকর্ষণীয় শখ

অনেকেই সিভিতে অনেক রকম লিখে থাকেন যেমন, আমি বাইরে যাই, প্রকৃতি উপভোগ করি আপনি এ ধরনের শখ যোগ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এগুলো বললে আপনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন হবেন , তা ফুটে ওঠে না।

বরং আপনি সিভিতে এমন কিছু শখের কথা লিখুন, যা আপনার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তুলে ধরে। যা আপনার দলগত যেকোনো ইভেন্ট ভালো শখ হতে পারে।

ভাষা দক্ষতা

বাংলাদেশে চাকরির জন্য বাংলা ও ইংরেজি জানা আবশ্যক। আপনার প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার কোনো কোর্স করে থাকলে তা আপনি সিভিতে উল্লেখ করতে পারেন।

আর আপনার ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস, টোয়েফল ও পিটিই পরীক্ষায় অংশ নিলে তার স্কোর লিখুন। এ ছাড়া আপনার আরো অন্য কোনো ভাষা জানা থাকলে সেটিও সিভিতে উল্লেখ করুন।

কম্পিউটার দক্ষতা

এখন বর্তমান যুগ টেকনোলজির যুগ এখন প্রায় সব চাকরির জন্য কম্পিউটার দক্ষতা জানা আবশ্যক। আপনি যে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য এপ্লাই করতে গেলে প্রথমে আপনাকে কম্পিউটার বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এখন সকল প্রতিষ্ঠানগুলো কম্পিউটার অভিজ্ঞতা চেয়ে থাকে।

কম্পিউটারের দক্ষতা যেমন সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট। এ ছাড়া কম্পিউটারের ফটোশপ বা ভিডিও এডিটিং জানা থাকলে আপনি সিভিতে উল্লেখ করতে পারেন।

কম্পিউটার বিষয়ে আপনি কোথাও প্রশিক্ষণ নিলে তার সাল ও তারিখসহ উল্লেখ করুন।

রেফারেন্স

আপনার পরিচিত যেকোনো পেশার ব্যক্তির নাম রেফারেন্স হিসেবে আপনি দিতে পারেন। আপনি যার রেফারেন্স দেবেন, আপনাকে অবশ্যই তাঁর অনুমতি নিতে হবে। তাঁর নাম, মোবাইলফোন নম্বর, ই-মেইল ও তাঁর পেশা ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ ভালোভাবে করতে হবে।

অঙ্গীকারনামা

CV লেখার সময় সিভিতে কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। অঙ্গীকারনামায় আপনাকে এসব বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে, আপনার সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল। লেখার নিচে আপনার নিজস্ব স্বাক্ষর থাকতে হবে।

আপনাকে একটা বিষয় ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে,

ফন্টের ব্যবহার

 সিভি লেখার সময় আপনাকে কম্পিউটারে টাইমস নিউ রোমান, অ্যারিয়্যাল বা ভারদানা ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট সাইজ ১১- এর কম হওয়া যাবে না।

সিভির মাঝে মধ্যে বোল্ড এবং হেডার অপশনও আপনি ব্যবহার করুন। তবে আপনাকে কিন্তু অবশ্যই কালো রঙ ব্যবহার করতে হবে।

প্রাসঙ্গিকতা

সিভি লেখার সময় আপনার অভিজ্ঞতা সিভিতে তুলে ধরবেন, সেগুলো আবেদন করা চাকরির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কি না, তা আপনাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে। আপনি যে চাকরিতে এপ্লাই করতে যাচ্ছেন বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের বিবরণ দেখুন,

এবং ভালোভাবে মিলিয়ে নিন সেগুলো আপনার চাকরির অভিজ্ঞতার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরপর আপনি সবগুলো বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আপনার সিভি পাঠিয়ে দিন।

বিশেষণ এড়িয়ে যান

আপনার সিভিতে পরিশ্রমী, মনোযোগী, উৎসাহী- এ ধরনের বিশেষণগুলো আপনি এড়িয়ে চলুন। এসবের পরিবর্তে আপনি কিছু অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করুন। যেমন, জবাবদিহি, লক্ষ্য ও অর্জন।

ছোট রাখুন

আপনার সিভি সংক্ষিপ্ত রাখুন, তবে সিভি ছোট করতে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা মুছে ফেলা যাবে না। গতানুগতিক নিয়মে আপনার দুই পৃষ্ঠায় সিভি শেষ করতে বলা হয়।

তবে সিভিতে দুই পৃষ্ঠার সিভি দেখলে নিয়োগকর্তারা সাধারণত বেশি খুশি হন।

নির্ভুল হোন

চাকরির নিয়োগকারীরা আপনার সিভির ভুলের ওপর বিচার করবে। সেটা হতে পারে আপনার সিভির বানানের ভুল, সিভির কাঠামোর ভুল অথবা আপনার সিভির বিরামচিহ্নের ক্ষেত্রে।

আপনি যখন সিভি লিখতে যাবেন তখন সিভি লেখার সময় সতর্ক থাকুন। কম্পিউটারে সিভি লিখলে স্বয়ংক্রিয় সংশোধন অপশন ব্যবহার করুন। আপনার সিভি তৈরি করার পর ভুল এড়াতে আপনি বার বার পড়ুন এবং অন্য আরেকজনকে দিয়ে ভালোভাবে পড়িয়ে নিন।

যখন আপনি CV লিখবেন তখন অবশ্যই আপনাকে সঠিক তথ্য সবকিছু দিয়ে ভালোভাবে সিভি তৈরি করতে হবে?

Leave a Comment